১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
সময় : দুপুর ৩:৩০
কাশ্মীরের অবন্তীপুরের উপর দিয়ে জম্মুগামী ন্যাশনাল হাইওয়ে-৪৪ ধরে, চলছিল ৭৮টি বাসের একটি আর্মি কনভয়; যা পরিবহন করছিলো ২৫৪৭ জন সিআরপিএফ জওয়ানকে। কনভয়টি সূর্যাস্তের আগেই গন্তব্য পৌঁছানোর কথা ছিল।
কিন্তু চলতিপথে লেথাপরার কাছাকাছি নিরাপত্তা বাহিনী পরিবহনকারী একটি বাসের সাথে বিস্ফোরক বহনকারী (স্কর্পিও SUV) সংঘর্ষ ঘটায়। প্রচন্ড বিস্ফোরণে শহীদ হন ৭৬তম ব্যাটালিয়নের ৪৪ জন সিআরপিএফ জওয়ান এবং আহত হন আরও অনেকে। এ দশকের অন্যতম মর্মান্তিক ও ভয়াবহ জঙ্গি হামলা সাক্ষী হয়ে রইলো পুরো বিশ্ব। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় ঘাতক স্কোরপিয়টি প্রায় ৩০০কেজি বিস্ফোরক পরিবহন করছিলো এবং আত্মঘাতী চালক আদিল আহমদ দার ওরফে আদিল আহমদ পাকিস্তান ভিত্তিক কাশ্মীরি জঙ্গি সংগঠন জাইশ-ই-মোহাম্মদ -এর সদস্য। যদিও পাকিস্তান কোনোরকম দায় বা সংযুক্ততা অস্বীকার করেছে ,যেখানে এ সংগঠনের আধিকারিক মাসুদ আজহার পাকিস্তানে খুললাম খুল্লা জীবন যাপন করছে।
মাত্র এক বছর আগে এ সংগঠনে যোগদানকারী কাকাপোরার ২২ বছর বয়সী বাসিন্দা, আত্মঘাতী আদিল আহমদ ওরফে গাডি তাকনওয়ালা ওরফে ওয়াকাস কমান্ডোর একটি ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে জাইশ-ই-মোহাম্মদ(JEM) হামলার দায় স্বীকার করেছে।
১৯৮৯ সাল পর থেকে এখন পর্যন্তু এটিই নিরাপত্তা বাহিনীর উপর সবচেয়ে নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা।
প্রশ্ন অনেক ..... পরিকল্পনা এবং কনভয়ের অবস্থান সম্পর্কে জঙ্গিদের এতটা সুস্পষ্ট ধারণা ছিল যে, আত্মঘাতী হামলাকারী ছাড়া বাকি জঙ্গি সাথীরা কোনো বিপত্তি ছাড়াই ফিরে যেতে সক্ষম হয়েছে। তবে আজ লিখবো শুধু মাত্র জঙ্গি সংগঠন জাইশ-ই-মোহাম্মদ(JEM) নিয়েই। কিভাবে এর জন্ম হলো..? উদ্দেশ্য ? এর পিছনে কাদের গোপন সমর্থন রয়েছে ? সবটাই কভার করার চেষ্টা করবো।
জাইশ-ই-মোহাম্মাদ (আক্ষরিক অর্থে "মুহম্মদ এর সেনাবাহিনী") একটি কাশ্মীরি সক্রিয় জিহাদী গোষ্ঠী। এ গোষ্ঠীর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ভারত থেকে কাশ্মীরকে আলাদা করা এবং পাকিস্তানের সাথে একত্রিত করা। ইতিপূর্বে এটি জম্মু ও কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি নাশকতা মূলক আক্রমণ পরিচালনা করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাদের তথ্য মতে , এটি আফগানিস্তানের জঙ্গি সংগঠন তালিবান ও আল-কায়েদার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে।
কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে, জাইশ-ই-মোহাম্মদ(JEM) সংগঠনটি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সঙ্গস্থা আই.এস.আই এর গোপন মদতে জন্মলাভ করে,যাতে তারা কাশ্মীর ও অন্যান্য স্থানে আক্রমণ ও তথ্য সংগ্রহে ব্যাক আপ প্ল্যান হিসেবে সুবিধা ও সমর্থন পেতে পারে। যদিও ২00২ সাল থেকে JEMকে পাকিস্তান থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু অন্যান্য নামগুলির অধীনে পুনরুজ্জীবিত হয়ে, এটি এক প্রকার খোলাখুলিভাবেই বিভিন্ন জিহাদি কার্যকলাপ পরিচালনা করে চলেছে।
এমনকি ,২০১৬ সালে, ভারতের পঠনকোট এয়ারবেসে আক্রমণের জন্য জাইশ-কেই যুক্ত থাকার সন্দেহ করা হয়েছিল। এই হামলা চালানোর জন্য পাকিস্তানই জাইশকে সহায়তা করেছে ,এমনটা অভিযোগ করেছে ভারত সরকারসহ আরো অন্যান্য কিছু সূত্র।
বিশ্লেষকদের মতে ,১৯৯০-এর শুরুতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সংস্থা (আইএসআই) এর মদতে হরকত-উল-মুজাহিদিনের সাথে যুক্ত কয়েকজন জিহাদি সন্ত্রাসীদের দ্বারা জাইশ-ই-মোহাম্মাদ-এর উৎপত্তি হয় । এরা পাকিস্তানের বিদেশি নীতির বৈধ অংশ হিসেবে, কাশ্মীরে জিহাদ ন্যায্য মনে করতেন এরা । ১৯৯৮-তে আমেরিকা হরকত-উল-মুজাহিদিন -কে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে এবং আফগানিস্তানে তাদের প্রশিক্ষণ শিবিরে বোমা হামলা করে। কিন্তু জিহাদীদের দমানো যায়নি।
১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে, এই হরকত সন্ত্রাসীরাই কাঠমান্ডু থেকে দিল্লিতেগামী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস ফ্লাইট-814 হাইজ্যাক করে এবং কান্দাহারে অবতরণ করায়। যেখানে আফগান তালেবান ও বিমানবন্দরে অবস্থানরত পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে তাদের জিম্মি করে , মুক্তিপণ হিসেবে ভারত সরকারের কাছে কারাগারে থাকা তিন হরকত কর্মী মাওলানা মাসুদ আজহার, আহমেদ ওমর সাঈদ শেখ এবং মুশতাক আহমেদ এর মুক্তি দাবি করে। নিরুপায় হয়ে ভারত সরকার তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়. মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের আইএসআইয়ের দ্বারা পাকিস্তান পাঠানো হয় এবং মাসুদ আজহার নতুন সংগঠন জাইশ-ই-মোহাম্মদকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয় । কিছু বিশ্লেষক যুক্তি দেন যে, আইএসআই লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এর ক্রমবর্ধমান শক্তি মোকাবেলার জন্যই JEM তৈরি করেছিলেন । অনেক বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন যে , পাকিস্তান ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) কাশ্মীরে এবং অন্যান্য স্থানে যুদ্ধ করার জন্য JEMকে ব্যবহার করেছে এবং এটিকে পূর্ণ সমর্থন প্রদান করে যাচ্ছে। যদিও ২00২ সাল থেকে , পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে JEMকে নিষিদ্ধ করেছে , তবুও এটি দেশে খোলাখুলিভাবেই বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড পরিচালনা করে চলেছে বিনা বাধায় ।
হরতাল-উল-মুজাহিদিনের সাবেক সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত জাইশ-ই-মোহাম্মদ(JEM) -এর সদস্যরা আল কায়েদা ও তালেবানদের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল। সদস্যরা আফগানিস্তানে আল কায়েদার প্রশিক্ষণ ক্যাম্প-এ প্রশিক্ষণ করতো এবং আল-কায়েদার প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতো ।
পরবর্তীকালে , ২০০১-এ লস্কর-ই -তাইয়েবা -এর সাথে মিলিত হয়ে জয়েশ-এর সদস্যরা আক্রমণ করে ভারতীয় পার্লামেন্ট হাউস। শহীদ হন ৬জন দিল্লী পুলিশ কর্মকর্তা সহ ১৪ জন।
মূলত এরপরই একটি পূর্ণ শক্তিশালী দল হিসেবে নিজেদের পরিচিত করে জাইশ-ই-মোহাম্মদ(JEM)..
চলবে ....
তথ্যসূত্র : Internet
সময় : দুপুর ৩:৩০
কিন্তু চলতিপথে লেথাপরার কাছাকাছি নিরাপত্তা বাহিনী পরিবহনকারী একটি বাসের সাথে বিস্ফোরক বহনকারী (স্কর্পিও SUV) সংঘর্ষ ঘটায়। প্রচন্ড বিস্ফোরণে শহীদ হন ৭৬তম ব্যাটালিয়নের ৪৪ জন সিআরপিএফ জওয়ান এবং আহত হন আরও অনেকে। এ দশকের অন্যতম মর্মান্তিক ও ভয়াবহ জঙ্গি হামলা সাক্ষী হয়ে রইলো পুরো বিশ্ব। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় ঘাতক স্কোরপিয়টি প্রায় ৩০০কেজি বিস্ফোরক পরিবহন করছিলো এবং আত্মঘাতী চালক আদিল আহমদ দার ওরফে আদিল আহমদ পাকিস্তান ভিত্তিক কাশ্মীরি জঙ্গি সংগঠন জাইশ-ই-মোহাম্মদ -এর সদস্য। যদিও পাকিস্তান কোনোরকম দায় বা সংযুক্ততা অস্বীকার করেছে ,যেখানে এ সংগঠনের আধিকারিক মাসুদ আজহার পাকিস্তানে খুললাম খুল্লা জীবন যাপন করছে।
মাত্র এক বছর আগে এ সংগঠনে যোগদানকারী কাকাপোরার ২২ বছর বয়সী বাসিন্দা, আত্মঘাতী আদিল আহমদ ওরফে গাডি তাকনওয়ালা ওরফে ওয়াকাস কমান্ডোর একটি ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে জাইশ-ই-মোহাম্মদ(JEM) হামলার দায় স্বীকার করেছে।
১৯৮৯ সাল পর থেকে এখন পর্যন্তু এটিই নিরাপত্তা বাহিনীর উপর সবচেয়ে নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা।
প্রশ্ন অনেক ..... পরিকল্পনা এবং কনভয়ের অবস্থান সম্পর্কে জঙ্গিদের এতটা সুস্পষ্ট ধারণা ছিল যে, আত্মঘাতী হামলাকারী ছাড়া বাকি জঙ্গি সাথীরা কোনো বিপত্তি ছাড়াই ফিরে যেতে সক্ষম হয়েছে। তবে আজ লিখবো শুধু মাত্র জঙ্গি সংগঠন জাইশ-ই-মোহাম্মদ(JEM) নিয়েই। কিভাবে এর জন্ম হলো..? উদ্দেশ্য ? এর পিছনে কাদের গোপন সমর্থন রয়েছে ? সবটাই কভার করার চেষ্টা করবো।
জাইশ-ই-মোহাম্মাদ (আক্ষরিক অর্থে "মুহম্মদ এর সেনাবাহিনী") একটি কাশ্মীরি সক্রিয় জিহাদী গোষ্ঠী। এ গোষ্ঠীর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ভারত থেকে কাশ্মীরকে আলাদা করা এবং পাকিস্তানের সাথে একত্রিত করা। ইতিপূর্বে এটি জম্মু ও কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি নাশকতা মূলক আক্রমণ পরিচালনা করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাদের তথ্য মতে , এটি আফগানিস্তানের জঙ্গি সংগঠন তালিবান ও আল-কায়েদার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে।
কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে, জাইশ-ই-মোহাম্মদ(JEM) সংগঠনটি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সঙ্গস্থা আই.এস.আই এর গোপন মদতে জন্মলাভ করে,যাতে তারা কাশ্মীর ও অন্যান্য স্থানে আক্রমণ ও তথ্য সংগ্রহে ব্যাক আপ প্ল্যান হিসেবে সুবিধা ও সমর্থন পেতে পারে। যদিও ২00২ সাল থেকে JEMকে পাকিস্তান থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু অন্যান্য নামগুলির অধীনে পুনরুজ্জীবিত হয়ে, এটি এক প্রকার খোলাখুলিভাবেই বিভিন্ন জিহাদি কার্যকলাপ পরিচালনা করে চলেছে।
এমনকি ,২০১৬ সালে, ভারতের পঠনকোট এয়ারবেসে আক্রমণের জন্য জাইশ-কেই যুক্ত থাকার সন্দেহ করা হয়েছিল। এই হামলা চালানোর জন্য পাকিস্তানই জাইশকে সহায়তা করেছে ,এমনটা অভিযোগ করেছে ভারত সরকারসহ আরো অন্যান্য কিছু সূত্র।
পর্ব -১
১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে, এই হরকত সন্ত্রাসীরাই কাঠমান্ডু থেকে দিল্লিতেগামী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস ফ্লাইট-814 হাইজ্যাক করে এবং কান্দাহারে অবতরণ করায়। যেখানে আফগান তালেবান ও বিমানবন্দরে অবস্থানরত পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে তাদের জিম্মি করে , মুক্তিপণ হিসেবে ভারত সরকারের কাছে কারাগারে থাকা তিন হরকত কর্মী মাওলানা মাসুদ আজহার, আহমেদ ওমর সাঈদ শেখ এবং মুশতাক আহমেদ এর মুক্তি দাবি করে। নিরুপায় হয়ে ভারত সরকার তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়. মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের আইএসআইয়ের দ্বারা পাকিস্তান পাঠানো হয় এবং মাসুদ আজহার নতুন সংগঠন জাইশ-ই-মোহাম্মদকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয় । কিছু বিশ্লেষক যুক্তি দেন যে, আইএসআই লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এর ক্রমবর্ধমান শক্তি মোকাবেলার জন্যই JEM তৈরি করেছিলেন । অনেক বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন যে , পাকিস্তান ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) কাশ্মীরে এবং অন্যান্য স্থানে যুদ্ধ করার জন্য JEMকে ব্যবহার করেছে এবং এটিকে পূর্ণ সমর্থন প্রদান করে যাচ্ছে। যদিও ২00২ সাল থেকে , পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে JEMকে নিষিদ্ধ করেছে , তবুও এটি দেশে খোলাখুলিভাবেই বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড পরিচালনা করে চলেছে বিনা বাধায় ।
হরতাল-উল-মুজাহিদিনের সাবেক সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত জাইশ-ই-মোহাম্মদ(JEM) -এর সদস্যরা আল কায়েদা ও তালেবানদের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল। সদস্যরা আফগানিস্তানে আল কায়েদার প্রশিক্ষণ ক্যাম্প-এ প্রশিক্ষণ করতো এবং আল-কায়েদার প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতো ।
পরবর্তীকালে , ২০০১-এ লস্কর-ই -তাইয়েবা -এর সাথে মিলিত হয়ে জয়েশ-এর সদস্যরা আক্রমণ করে ভারতীয় পার্লামেন্ট হাউস। শহীদ হন ৬জন দিল্লী পুলিশ কর্মকর্তা সহ ১৪ জন।
মূলত এরপরই একটি পূর্ণ শক্তিশালী দল হিসেবে নিজেদের পরিচিত করে জাইশ-ই-মোহাম্মদ(JEM)..
চলবে ....
তথ্যসূত্র : Internet
0 Comments