পর্ব -২
( প্রথম পর্বের link )
JEM -এর ঘোষিত উদ্দেশ্য হল কাশ্মীরকে ভারতের অধীন থেকে মুক্ত করা এবং পাকিস্তানের সাথে একত্রিত করা। কাশ্মীর জিহাদিদের কাছে ভারতে প্রবেশের "গেটওয়ে" হিসাবে বিবেচিত এবং কাশ্মীর মুক্ত করার পর, এ সংগঠন ভারত থেকে হিন্দুদের এবং অন্যান্য অমুসলিম সম্প্রদায়কে বিতাড়িত করার অভিপ্রায় নিয়ে ভারতের অন্যান্য অংশে তার জিহাদি কার্যকলাপ পরিচালনা করার লক্ষ্য রাখে।
এছাড়াও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বাহিনী তাড়ানোর লক্ষেও এদের যোগদান দেখা যায় । JEM নেতা মাসুদ আজহার করাচীতে এক ভাষণে বলেন, " আমেরিকা ও ভারতের নিষ্ঠূরতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত , জিহাদের জন্য বিয়ে করুন , জিহাদের জন্য সন্তানের জন্ম দিন এবং জিহাদের জন্য অর্থ উপার্জন করুন। "
JEM প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা (আমির) মাওলানা মাসুদ আজহার, যিনি এর আগে হরকত-উল-মুজাহিদিন -এর নেতৃত্ত্ব দিয়েছেন; তিনি ধর্মীয় মাদ্রাসা (করাচির জামিয়া উলুম-উল-ইসলামিয়া)-এ তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমর-এর সাথে ঘনিষ্ঠ সহচর্যে ছিলেন। এছাড়া তালেবান ও আল কায়দার সঙ্গে তার দীর্ঘকালস্থায়ী সংযোগ ছিল। তিনি আফগানিস্তানে যুদ্ধ করেছিলেন এবং চেচনিয়া, মধ্য এশিয়া ও সোমালিয়াতে হরকত এর বিস্তারে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া সোমালিদের আমেরিকান ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারগুলিকে কীভাবে আক্রমণ করতে হবে, তা শেখানোর জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন। ১৯৯৯-এর দশকের গোড়ার দিকে তহবিল গঠনের জন্য ব্রিটেনে অবস্থান কালে , ওসামা বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে তাকে বিবেচনা করা হতো । ১৯৯৪ সালে আজহার ভারত-শাসিত কাশ্মীরে একটি "মিশন" এ গিয়ে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা গ্রেফতার হন। জানা গেছে, ওসামা বিন লাদেন আজহারকে মুক্তি চেয়েছিলেন এবং আল-কায়েদাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ,যার ফলে তারা হাইজ্যাকিংয়ের মাধ্যমে আজহারের মুক্তি দাবি করেন, এবং সফল হন । তারপরে, আজহার পাকিস্তানে আত্মগোপন করেন এবং আইএসআইয়ের দ্বারা নতুন সংগঠন জয়শ-ই-মোহাম্মদ এর নেতা হিসাবে প্রচারিত হন । ২০১০ সালে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ দ্বারা আজহারকে "গ্লোবাল টেরোরিষ্ট " হিসাবে বিশেষভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
মাসুদ আজহারের ভাই আব্দুল রউফ আসগর ও JEMএর একজন সিনিয়র নেতা ও গোয়েন্দা সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন । ২০০৭ সালে মাসুদ আজহারের অনুপস্থিতিতে, তিনি আইসি ৮১৪ বিমান অপহরনের নেতৃত্ব দেন। এরপর ২০০৮ থেকে, তিনি ভারতে সংঘঠিত বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী বোমাহামলা, জিহাদি হামলার প্রধান ও সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ২০১৬-এ পাঠানকোট হামলায় তার সরাসরি সংযুক্তি ;এমনকি টেলিফোনের মাধ্যমে তিনি সন্ত্রাসীদের নির্দেশিত করেছিলেন এবং বাইরের পরিস্থিতি সম্পর্কিত সব খবর তাদের পর্যন্ত পৌছেছিলেন । মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আব্দুল রউফ আসগারকেও "গ্লোবাল টেররিস্ট " হিসাবে ঘোষণা করেছে ।
২০০২তে করাচীতে JEMএর প্রবর্তনকালে প্রায় ১০০০০ সশস্ত্র অনুসারী উপস্থিত ছিলেন। আফগানিস্তানে তালেবান ও আল-কায়েদা পাশাপাশি লড়াইয়ে যোগদানের সাথে সাথে ,এই সদস্যরা ও এই সংগঠন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি শত্রূতার আনুগত্য দেখিয়েছিল।
JEMএর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ অনুসারী পাঞ্জাব মুলতান, বাহওয়ালপুর এবং রহিম ইয়ার খান জিলার বাসিন্দ। এছাড়া আফগান ও আরবদের একটি বড় সংখ্যা এ সংগঠনে যুক্ত রয়েছে । পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কয়েকজন পশ্চিমা জঙ্গিও এতে যুক্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রশিদ রউফ, যিনি ২০০৬-এর ট্রান্সআটলান্টিক বিমান সংস্থা ধ্বংসের চক্রান্তকারীদের একজন ; শেহজাদ তানবীর যিনি ২০০৫-এ লন্ডন ভূগর্ভস্থ বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং আহমেদ ওমর শেখ, যিনি সংবাদিক ড্যানিয়েল পার্ল হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত হন । মাসুদ আজহার ঘোষণা করেছেন , তার নেতৃত্বাধীন প্রায় ৩০০ জন আত্মঘাতী হামলাকারী রয়েছে ।
চলবে......
তথ্যসূত্র :; internet
0 Comments